শান্তি পাঠ

শান্তি পাঠ

by Anindita Ganguly

Photograph by Debaditya Sarkar

 

ঈশোপনিষদ সব চেয়ে প্রাচীন উপনিষদ । বড় গভীর এর উপলব্ধি । ধর্ম যে শুধু পাঠ ধ্যান পূজা আরাধনা নয়, এ যে নিজের মধ্যে পরমের প্রকাশ, আর তা যে প্রত্যক্ষ উপলব্ধির বিষয়, তা এই উপনিষদটির মধ্যে প্রকাশিত । যে কবিতা কটি লেখা হয়েছে তা একান্তই নিজের অনুভব। শ্লোক গুলি পড়তে পড়তে মনের মাঝে যে শান্ত আনন্দ অনুভব করি তার থেকেই এগুলির জন্ম । অনুবাদ নয় । তাই ভাষার মিল খুঁজতে চাওয়া বিড়ম্বনা হবে ।

শান্তি পাঠ

পূর্ণ হতে পূর্ণ শুধু আসে
পূর্ণ ছিলাম পূর্ণ তাই আছি
এ পূর্ণের হবেনা যে ক্ষয়
এ অনাদি অজর অব্যয়
তোমার অমৃত দিয়ে
পূর্ণ হোক এ মানব
শান্তির অক্ষয় বারিধারায়
ধন্য হোক ধরা ।

(ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে ।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ।।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।। )


এ বিশ্বে তোমার অধিকার
সচেতন সৃষ্টির লীলা মাঝে
আমার অগম্য বোধে
ব্যাপৃত তুমি যে কাজে –
তার প্রতি শ্রদ্ধা যেন থাকে অবিচল ।
না যেন মনে জাগে কুশ্রী হাহাকার –
কি ছিল কি আছে আর
কত টুকু পাওয়া নাহি হল । এ বিচার
মহতের প্রবেশের পথ রোধ করে চিরকাল
তাই তোমাতেই করি নির্ভর । (১)

(ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ ।
তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য কিঞ্চনম্ ।।)


হে পিতা, তোমার এ আবাসে
অন্নময় প্রাণময় শতবর্ষের আশে
কি মোহে যে ভোগের অলীক মায়াজাল
আচ্ছন্ন করেছে মোরে! হায় কি যে করি
চিরকাল জন্ম জন্ম ধরি আত্ম হননের মত
কুশ্রী পাপে নিমজ্জিত হয়ে, কি ভরসায়
কাটাই এ জন্মান্তর বেলা
বৃথা এ জন্ম আর মরণের খেলা । (২,৩)

(কূর্বণ্ণেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতোহস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে ।।
অসুর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃতাঃ ।
তাংস্তে প্রেত্যাভিগচ্ছন্তি যে কে চাত্মহনো জনাঃ ।।)


আমার এ মনের চেয়ে তুমি দ্রুততর
অন্তরীক্ষে নক্ষত্রের গতি
তারও চেয়ে দ্রুততর তুমি
আমার এ বাসভুমি ছেড়ে, উদ্ধে বাহু তুলে
তোমাকে চেয়েছি ছুঁতে- তবুও পারিনি । (৪)

(অনেজদকং মনসো জবীয়োঃ নৈনদ্দেবা আপ্নুবন্ পূর্বমর্ষৎ ।
তদ্ধাবতোহন্যানতেতি তিষ্ঠৎ তস্মিন্নপো মাতরিশ্বা দধাতি ।।)


পরম তোমাকে খুঁজেছি অনেক
অন্তরীক্ষে জলে
হৃৎ কন্দরে পেয়েছি স্পর্শ
সস্নেহ, সচেতনে ।
চক্ষে তোমার সুন্দর রূপ
কানেতে মোহন বাণী
তোমার মহিমা করেছে প্রকাশ
অমৃত দিয়েছে আনি । (৫,৬)

(তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দূরে তদন্তিকে ।
তদন্তরস্য সর্বস্য তদু সর্বস্যাস্য বাহ্যতঃ ।।
যস্তু সর্বাণি ভূতানি আত্মন্যেবানুপশ্যতি ।
সর্বভূতেষু চাত্মানং ন ততো বিজুগুপ্সতে ।।)


অশোক নির্মোহ তুমি
তুমি সেই এক
সবাত্মা তুমি সেই
সর্বদর্শী কাল
তুমি জ্যোতির্ময়
নিত্য নিয়ন্তা আমার । (৭,৮)

(যস্মিন্ সর্বাণি ভূতান্যাতত্মৈবাভূদ্বিজানতঃ ।
তত্র কো মোহ কঃ শোক একত্বমনুপশ্যতঃ ।।
স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্ ।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথাতথ্যতোহর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।)


এত আয়োজন
ফুল নৈবেদ্য ধূপ,
করে নিবেদন –
চক্ষুষ্মান অন্ধ তবে তুমি ।
এই মর্ত্য ভূমি
কোনও দেবতার ক্ষেত্র নয় ।
এই পূজা দেবে ঢেকে
তোমার বোধের অনুভব ।
আজ তবে ক্ষান্ত হোক
আরাধনা সব
মর্মে শুধু জেগে থাক
পরম আস্বাদ । (৯)

(অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহবিদ্যামুপাসতে ।
ততো ভূয়ইইব তে তমো য উ বিদ্যায়াং রতাঃ ।।)


দেখ আমি না জেনেও
কত কীর্তির সৃজন করেছি ।
তারা যেন দেবত্বের পথে
উত্তীর্ণ করে দেবে জীবনের শেষে ।
কিন্তু কি অজ্ঞ দেখ আমি
পরমার্থ এক নির্বীজ অস্তিত্ব
জেনেও আমি ব্যাপৃত সৃজনে ।
এ কর্ম এই জ্ঞান অকস্মাৎ
নাশ হবে বোধের অতীত,
শুধু রবে তোমাতেই
বিচরন আনন্দে সুস্থির । (১০, ১১)

( অন্যদেবাহুর্বিদ্যয়াহন্যদাহুরবিদ্যয়া ।
ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ।।
বিদ্যাং চাবিদ্যাং চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ।
অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীর্ত্বা বিদ্যয়াহমৃতমশ্নুতে ।। )


গৈরিক বসনে আমি
ঘোষণা করেছি
নির্বাণ আমার ইষ্ট
আর কিছু নয়
এই মোহ ময় পৃথিবীর মায়াজাল চিরে
দূরে বহুদূরে, যেতে চাই চলে
ওই যারা রূপ রস স্পর্শ নিয়ে
কামনার চরিতার্থতায়
বাঁচে আর, চির অপেক্ষায়
মৃত্যু কে বরণ করে জন্ম হবে বলে
তার থেকে দূরে যাই চলে ।
কিন্তু পিতা তোমার মঙ্গল হস্ত কই?
তবে কি এ সম্ভূতি তোমার ঈপ্সিত পথ নয়?
তবে এসো প্রাণে, দাও স্পর্শ
অনুভবে জেনে নিতে দাও
যথার্থ অমৃতময়
তোমার সে রূপ জ্যোতির্ময় । (১২, ১৩, ১৪)

(অন্ধং তমঃ প্রবিশ্যন্তি যেহসম্ভূতিমুপাসতে ।
ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ ।।
অন্যদেবাহুঃ সম্ভবাদন্যদাহুরসসম্ভবাৎ ।
ইতি শুশ্রুম ধীরাণাং যে নস্তদ্বিচচক্ষিরে ।।
সম্ভূতিং চ বিনাশং চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ।
বিনাশেন মৃত্যুং তীর্ত্বাহসম্ভূত্যাহমৃতমশ্নুতে ।।)


পিতা তুমি উন্মোচন কর
মিথ্যা মায়া আবরণ ।
দেখে নিতে দাও তোমার
ভুবনমোহন রূপ ।
সংবরণ কর তোমার তেজ –
আমি তোমার স্নেহের প্রত্যাশী ।
আজ আমার শেষ নিঃশ্বাস
বিলীন হবে উজ্জ্বল আগুনে ।
এখন স্মরণ কর আমাকে ।
যে পূর্ণ থেকে এসেছিলাম
সেই পূর্ণ ডাকে ।
পিতা স্পর্শ দাও , বিলীয়মান
সত্ত্বায়, জাগরুক হোক চির কল্যাণ । (১৫, ১৬)

(হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যাস্যাপিহিতং মুখম্ ।
তত্ত্বং পূষণ্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে ।।
পূষন্নেকর্ষে যম সূর্য প্রাজাপত্য বূহ্যরশ্মীন্
সমূহ তেজো যত্তে রূপং কল্যাণতমং তত্তে পশ্যামি ।
যোহসাবসৌ পুরুষঃ সোহহমস্মি ।।)

১০
তোমার রুদ্র জ্যোতির্ময় রূপে
আমার শেষ নিঃশ্বাস
বিলীন হোক । আগুনের
সুন্দর শিখায় তপ্ত হোক
আমার নশ্বর শরীর ।
সবার অজ্ঞাত সেই অগ্নিময় পথে
পিতা তুমি নিয়ে চল
পূত অগ্নির যজ্ঞ আহুতির মত
আমি জ্বলে যাই, চলে যাই পূর্ণতার মাঝে । (১৭, ১৮)

(বায়ুরনিলমমৃতমেদং ভষ্মান্তং শরীরম্ ।
ওঁ ক্রতো স্মর কৃতং স্মর ক্রতো স্মর কৃতং স্মর ।।
অগ্নে নয় সুপথা রায়ে অস্মান্বাশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্ ।
যুযোধ্যস্মজ্জুহুরাণমেনো ভূয়িষ্ঠাং তে নম-উক্তিং বিধেম ।। )

Comments
  1. jayakc2004@yahoo.co.in' jaya choudhury

Leave a Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *